দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সরল মনা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ঢাকায় এনে মাদরাসা শিক্ষার পাশাপাশি স্বাবলম্বী করার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের দিয়ে হালাল চাঁদাবাজি করাতো একটি চক্র। এতিমখানার লিল্লাহ বোডিংয়ের আড়ালে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দিয়ে চাঁদা আদায় ও অর্থ আত্নসাৎ করা চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ।
চক্রটি ধর্ম ও প্রতিবন্ধীদের অসহায়ত্বকে পুজি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলো। গত শুক্রবার বিষয়টি জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ দক্ষিণ) মো. আমিনুল ইসলাম।
রাজধানীর কেরাণীগঞ্জের আরশিনগর এলাকার বাড়িভাড়া নিয়ে ইহসানিয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা নামে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে দেশের বিভিন্নস্থান হতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের সংগ্রহ করে ঢাকা ও তার আশপাশ এলাকার ধর্মপ্রান মুসলিম ও সহজ সরল জনসাধারণের কাছ হতে চাঁদা উত্তোলন ও টাকা আত্মসাৎ করে আসিতেছিল একটি চক্র।
চক্রের প্রধান ইয়াসিন হুজুর ওরফে ইয়াসিন ও তার স্ত্রী সিমা আক্তার প্রতিবন্ধী ছাত্রদের পড়াশোনার পাশাপাশি উন্নত খাবার-দাবারের কথা দিলেও তাদের দিয়ে চাঁদাবাজি করানোই ছিলো প্রধান টার্গেট।
মাসে ৫ হাজার টাকা আর নিম্নমানের পঁচা-গলা খবার ছাড়া এসব প্রতিবন্ধীদের যা জুটত তা কেবলই লাঞ্চনা। অসুস্থ কিংবা যে কোন প্রয়োজনে কিছু লাগলেই কাটা যেতো তাদের বেতন। আর কালেকশন কম হলেই চালাতো নির্যাতন। প্রতিমাসে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করতো চক্রটি অভিযোগ প্রতিবন্ধী ছাত্র ও পুলিশের।
মাদরাসার ৫ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হুজুরের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চাইলে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে পুলিশের চৌকস দল গত বৃহস্পতিবার শাক্তা ইউনিয়নের আরশিনগর সুলতানা রাজিয়া স্কুলের সামনে অভিযান চালিয়ে আসামি মো. ইয়াসিন হুজুর ও তাহার স্ত্রী সিমা আক্তারকে চাঁদা উত্তোলনের নগদ পাঁচ হাজার একশ টাকা ও চাঁদা আদায়ের ১টি রশিদ বই, লিফলেট পেপার ও ভিজিটিং কার্ডসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। এসময় মিলন ইসলাম রাজু (২২) আলি আজম (৩০) মো. হাসিবুল ইসলাম (২০) জাহিদ (২৫) ও আব্দুল্লাহ (৩০) নামে ৫ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত অসহায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ও আশপাশের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় দীর্ঘদিন ধরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাথে প্রতারণা করে আসছিলো চক্রের দুই মূল হোতা।
প্রতিবন্ধীদের দিয়ে অর্জিত অর্থ তাদের জীবনযাত্রার কোনরুপ সুযোগ সুবিধা প্রদান না করে আসামিরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করতো বলে জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপরাধ দক্ষিণ মো. আমিনুল ইসলাম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মামুন অর রশিদ, ওসি অপারেশন মুন্সি আশিকুর রহমানসহ অনেকে।
টিএইচ